সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে পেশাজীবী নেতারা পরামর্শ দিলে তিনি তাতে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। গতকাল সন্ধ্যায় প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে পেশাজীবী নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ডিইউজে’র সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা আক্তার পপি, বোরহানউদ্দিন, মামুন হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, পেশাজীবী নেতারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। তারা বলেন, চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় ঢাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে আছেন। নির্বাচনে অংশ নিলে তারা একত্রিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। নেতারা নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচনী এলাকায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলমান আন্দোলন শিথিল করার পরামর্শ দেন। তবে তারা এও বলেন, সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে সরকারের অবস্থানের ওপর। এদিক বিবেচনা করে জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেন নেতারা।
এদিকে বৈঠক শেষে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি বরাবরই একটি নির্বাচনমুখী দল। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দলটি সবসময়ে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ফোরাম হচ্ছে- দলের স্থায়ী কমিটি ও ২০ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটি। সেখানেই নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা দেবে। বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কেমন মনে হয়েছে- জানতে চাইলে এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমার কাছে তার (খালেদা জিয়া) মনোভাব ইতিবাচক মনে হয়েছে। এ সময় গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের প্রতি বিএনপি বেশি নজর দিচ্ছে। বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে আন্দোলনের কর্মসূচির কি হবে জানতে চাইলে এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, দলের স্থায়ী কমিটি ও ২০ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে চলমান আন্দোলনের ধরন (প্যাটার্ন) পরিবর্তন আসতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ থাকায় বেগম জিয়া তার উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা আমাদের বলেছেন।
এদিকে দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, বিএনপি এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচনে যাবে কিনা, কি করা উচিৎ- তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল দলের নিখোঁজ যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের গুলশানের বাসায় তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। মাহবুবুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে দলে দুই রকমের ভাবনা-চিন্তা চলছে। তৃণমূল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একপক্ষ বলছেন, দলের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। এই নির্বাচনে সরকারকে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। আরেক পক্ষ বলছেন- কিভাবে নির্বাচন হবে? দলের প্রার্থী যারা হবে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। নেতাকর্মীরা অনেকেই জেলে আছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে কিভাবে নির্বাচনে আমরা অংশ নেবো? নিজের ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরে সাবেক এই সেনা প্রধান বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি আজ সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশি ভাবতে হবে। দশম যে সংসদ চলছে, তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ সংসদ। তাই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে এখন গুরুত্ব দিতে হবে। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলে যে মত শক্তিশালী হবে সে অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত হবে বলে প্রত্যাশা করছেন মাহবুবুর রহমান।
Leave a Reply